বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৭:১১
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব

পরিবার হলো মানুষের প্রথম বিদ্যালয়-যেখানে আমরা ভালোবাসা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক নিয়ম শেখি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবার হলো মানুষের প্রথম বিদ্যালয়-যেখানে আমরা ভালোবাসা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক নিয়ম শেখি। সম্পর্ক যদি একবার ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে শুধু কথাবার্তা থেমে যায় না; নরকের মত কষ্ট, অনিশ্চয়তা এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিও জমে যায়। ইসলামের শিক্ষায়ও সম্পর্কের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ; আত্মীয়তা কেবল রক্তসম্পর্কই নয়, বরং মানবিক দায়িত্ব ও মমতার এক নেটওয়ার্ক। “তোমার আত্মীয়স্বজনওএমনকি যদি তারা অবিশ্বাসীও হয়-তাদের প্রতি তোমার ভালোবাসা ও মমতা হিসেবে থাকা উচিত; সম্পর্ক ছিন্ন করা শরিয়তের বিরুদ্ধে।” এই নির্দেশনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সম্পর্ক রক্ষা করা আল্লাহর ইচ্ছার অংশ।

অর্থ ও পরিণতি

উক্ত বাণীর অর্থ সহজ: আত্মীয় যদি ভুল পথে যায়, অপরাধ করে, বা এমন সিদ্ধান্ত নেয় যা আমাদের অনুকূলে নয়-তা বলে তাঁকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা বা জীবনের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পর্ক ছিন্ন করায় সমস্যা সমাধান হয় না; বরং মন থেকে শিক্ষা, নৈতিক দিক-নির্দেশনা ও সুশিক্ষার সুযোগই কেটে যায়। যখন তুমি কাউকে তাড়িয়ে দাও, তুমি তার উপর নৈতিক প্রভাব ও ভালো-মন্দ বোঝানোর স্থানই নষ্ট করে দাও। পরিবারের বাইরে থাকা ব্যক্তি সহজেই ভুল দিকগুলোতে আরও গভীরভাবে নিয়ে যেতে পারে-কারণ তার একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বাস্তবিক প্রয়োগ-দায়িত্ব ও সীমা

এটা নয় যে সম্পর্ক বজায় রাখা মানেই সব কিছু নীরবে সহ্য করা। সম্পর্ক রক্ষা করবেই-তবে যৌক্তিক সীমা ও সুস্থ সীমারেখা রেখে। যদি কোনো আত্মীয় অনৈতিকতা করে, তার বিরুদ্ধে সমাজ বা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত; তবু ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ-পরামর্শ, সদ্বুদ্ধি, এবং প্রয়োজন হলে পেশাদার সহায়তার মাধ্যমে-থেকে যাওয়াই শ্রেয়। সন্তানকে বাড়ি থেকে তাড়া দেওয়া মানে তাকে একাই ছেড়ে দেওয়া; পরিবর্তে প্রেম ও কঠোরতা-দুইয়ের সমন্বয় করতে হবে। শিক্ষা, পরামর্শ এবং দরকারে আত্মীয়দের সামনে দায়িত্ববোধ জাগানোর চেষ্টা করা দরকার।

করণীয় উপায়সমূহ

১) ধৈর্য ও সহনশীলতা: প্রথমে কণ্ঠ শীতল রাখুন; দ্রুত রেগে সম্পর্ক ছিন্ন করা কখনো জীবনের সঠিক সমাধান হয় না।
২) খোলামেলা আলোচনা: অভিযোগ থাকলে শান্তভাবে কথা বলা, অপরের ভুল বোঝাপড়া দূর করা।
৩) সীমা নির্ধারণ: অপ্রত্যাশিত আচরণ বা অশোভনতার ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ কিন্তু তার মানেই সম্পর্ক ছিন্ন নয়।
৪) সহায়তা ও পরামর্শ: প্রয়োজনে মাতামহ-মাতামহী, পারিবারিক বয়স্করা, ধর্মীয় নেতা বা পেশাদার কাউন্সেলারের সহায়তা নিন।
৫) প্রার্থনা ও নৈতিক নির্দেশনা: ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সন্তান বা আত্মীয়কে ফিরে আসার পথ দেখাতে চেষ্টা করুন; তবুও জোর করে বললে ফল অসম্ভব।

দীর্ঘমেয়াদি লাভ

পরিবারের বন্ধন রক্ষা করলে একাধিক ইতিবাচক ফল আসে-মানসিক শান্তি, সামাজিক সুরক্ষা, সমস্যার সমাধানে সহায়ক নেটওয়ার্ক এবং আগামীর প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ আদর্শ। সম্পর্কের ভিত ভাঙলে পুনরুদ্ধার কঠিন; তাই রুখে দাঁড়ানোই নয়, মেরামত করার চেষ্টা করাটাই জ্ঞানসম্মত পথ। একজন বাবা-মা বা অভিভাবক যদি সন্তানের ত্রুটির পরেও তাকে উপকারে আনেন, তাহলে সেই সন্তান সংশোধিত হওয়ার সুযোগ পায়; আর সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেই সংশোধনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

শেষ কথা:

পরিবার হলো মানবিক ও সামাজিক বন্ধনের মূল খুঁটি। সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি সহজ কিন্তু ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত; ইসলামী শিক্ষাও তা নিষেধ করে। আমরা যদি সত্যিকারের দায়িত্ব, ধৈর্য, সীমাবদ্ধতা ও প্রেম দিয়ে আচরণ করি, সে ক্ষেত্রে আত্মীয়ের ভুলে গিয়ে তাকে ত্যাগ করা নয়-বরং তাকে সুশিক্ষা, সহায়তা ও পরিত্রাণের পথ দেখানো আমাদের কর্তব্য। সম্পর্ক রক্ষা করা মানে দুর্বলকে শক্তি দেওয়া, অপথে গেলে ফিরে আসার দরজা খোলা রাখা-এবং শেষ পর্যন্ত এটি সমাজ ও ব্যক্তির উভয়ের কল্যাণে রূপান্তরিত হয়। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে বিরত থাকুন; পরামর্শ দিন, সীমা রাখুন, কিন্তু মানবিক সম্পর্কের বন্ধন কেটে ফেলবেন না-কারণ সম্পর্কটাই অনেক সময় মঙ্গল ও পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।

রিপোর্ট: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha